বহিস্কৃতরা দলীয় পদে পাবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচন কমিশনে কারা আসছেন সেটি না ভেবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি শুরু করছে আওয়ামী লীগ। ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে দল গোছাতে ফের মাঠে নামছে আট সাংগঠনিক টিম। দলের ভেতরের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নির্বাচনে পরিচ্ছন্ন দল নিয়েই প্রতিযোগিতায় নামতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দিকে তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক দলগুলো। আর, সম্ভাব্য এই কমিশনের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।
নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর পরই হবে কুমিল্লা ও সিলেট সিটি নির্বাচন। দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
তাই দ্রুত স্থগিত থাকা তৃণমূলের সম্মেলনগুলো শেষ করতে আটটি সাংগঠনিক দলকে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
দলীয় প্রার্থী বাছাই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও বিভিন্ন জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ভেতরে ভেতরে এই কাজ নিজেই এগিয়ে রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য নবায়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনেও জোর দেয়া হচ্ছে। জোটের মেরুকরণেও নজর রাখছেন দলটির হাইকমান্ড।
ক্ষমতাসীন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজও জনগণের কাছে তুলে ধরবেন তারা। তবে সবার আগে দল গুছাতে চাইছেন তারা।
নেতারা জানান, করোনার কারণে দলের তৃণমূলের সম্মেলন যথাযথভাবে করা যায়নি। সরকারি বিধি-নিষেধের মেয়াদ শেষ হলেই দলের তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হয়ে যাবে।
সদ্য শেষ হওয়া আট দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বিভক্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিভক্তি দূর করে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবে আওয়ামী লীগ।
দল ও সহযোগী সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করার পাশাপাশি নির্বাচনকেন্দ্রিক সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে গতি পাচ্ছে ইশতেহার তৈরির কাজও।
বহিস্কৃতরা দলীয় পদে পাবে না : বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ কোনো দলীয় পদে আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এসময় যাদের শোকজ করা হয়েছে, তাদের উত্তর সন্তোষজনক না হলে তাদের বেলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য বলেও জানান তারা।
বুধবার সকালে খুলনা বিভাগের অন্তর্গত সাংগঠনিক জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ, দলীয় সংসদ সদস্যগন এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের সাথে খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সভা হয়েছে। আমাদের নেত্রী সেখানে কিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই দিক নির্দেশনার আলোকে আমাদের আজকের এই ভার্চুয়াল সভা। মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে, তৃণমূল পর্যায়ে মাননীয় নেত্রীর যে নির্দেশনা অনুযায়ী সম্মেলন করা, সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানো।
তারা বলেন, যারা দলের নির্দেশনা মানে না, তাদের বিষয়ে তো আমাদের আগে থেকেই নির্দেশনা আছে। যারা বহিষ্কার হয়েছে, সাময়িক বহিষ্কার হয়েছে, শোকজ হয়েছে, তাদেরটা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের নেতৃত্বে আনা যাবে না। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে দলকে গণমুখী করা, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে ঢেলে সাজানো যাতে দলের নতুন নেতৃত্বের ওপর জনগনের প্রত্যাশারা জায়গাটা আরও শক্তিশালী হয়, সুদৃঢ় হয়। এ লক্ষ্যে দলকে সম্মেলন করতে হবে।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে তাদেরকে নেতৃত্বে আনার সুযোগ নেই। কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেই তারা আসতে পারে না। প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হতে পারে না। যাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়েছে তাদেরকে জায়গা দেওয়ার সুযোগ আছে কিন্তু সেটা বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর। এর আগে তাদেরকে কোন জায়গায় আনা যাবে না। যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে, তাদের নিষ্পত্তি হওয়ার পর তারা পদে আসতে পারেন।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সাংগঠনিক অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তারা বলেন, আগামী ২১ শে ফেব্রুয়ারির পর সাংগঠিক কার্যক্রম গতিশীল হবে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন, পারভিন জামান কল্পনা ও অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা।